Posts

Showing posts from July, 2019

অনিশ্চয়তাই জীবন

Image
আজকে নিয়ে পাঁচদিন হল এখানে কারেন্ট নেই। কাছের হেল্থ সেন্টারে জেনেরেটর চালিয়ে কোনমতে কাজ চালাচ্ছে। এই জায়গাটার ভৌগলিক অবস্থান বুঝানো আমার মত পন্ডিতের পক্ষে একটু কঠিন। জায়গাটার নাম চাপড়; বরপেটা আর ধুবরীর মাঝামাঝি। ধুবরী টাউন থেকে তিন ঘন্টার দূরত্ব । চারিদিক পাহাড় আর গোটাকতক নদীতে ঘেরা। হাতিপোতা জায়গাটা এই চাপড় থেকে ঘন্টা দেড়েকের দূরত্ব। বেশ কিছু খরস্রোতা নদী আর পাহাড়ে মিলে একটা মনোরম পরিবেশ। গত কয়েকমাসে এখানে আসার সময় বাসে উঠে হাতিপোতা আসলে মোবাইল বাগিয়ে রেডি হয়ে থাকতাম। এবারও 16ই জুলাই বাসে বসে অপেক্ষায় ছিলাম। নদীর জল ফুঁসতে ফুঁসতে রাস্তায় উঠে এসেছে। বাস মোটামুটি কোমর জলে স্রোত ঠেলে পার হচ্ছে। সেটাই ছিল শেষ বাস ধুবরী থেকে চাপড় আসার।  আমার কাজের এলাকাটা চারটে GP নিয়ে। ধীরেচর তরঙ্গা, বারানিতারা, ফলিমারি, বহুলপুর।  চারটে গ্রামেই জলের তলায়। মানুষ গরুবাছুর নিয়ে রাস্তায় উঠে এসেছে। মূলতঃ চাপড় মেইনরোডের ধারে প্লাষ্টিক টাঙ্গিয়ে বাথরুম ইত্যাদির ব্যবস্থা। সামনের স্কুলে শপাঁচেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ত্রাণ এসেছে চাল, ডাল সেরিল্যাক্স। গতকাল সন্ধ্যেবেলা গেছিলাম। :ও মেডাম খবরের কাগজ থেকে আসছ...
Image
অফিসিয়াল ট্রিপে যাচ্ছেন। বিশেষ গোছানোর সময় পাননি। খাবার দাবার তো খোদার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। টিকেট ওয়েটিং এ আছে। ট্রেনে উঠে দেখা গেল টিকিট কনফার্ম হয়েছে । যাক বাবা বাঁচলেন। কিন্তু আদপে দেখলেন যে বিষয়টা ততটা সুখের হল না। এমনিই তিস্তাতোর্সায় চেপে অফিসের কাজে যাচ্ছি  এই কথাটা একশো একবার লিখলেও মাথায় বসবে না। সবসময়ই মনে হবে আপ্নার উপর ইমোশনাল টর্চার হচ্ছে। তারপর দেখলেন আপনার সিটের ওপরে নিচে সামনে একদল লোকজন হৈ হৈ করতে করতে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে? যেখানেই যাক আপ্নার কি বাপু?! হয় দার্জিলিং নয় গ্যাংটক অথবা লাভা লোলে গাঁও, রাবাংলা, গুরুদংমা...যমের দক্ষিণ দুয়ার যেথা খুশি যাক। আপ্নি তো অফিসের কাজে যাচ্ছেন।  যত্ত ভুলভাল লোকজন ! বেড়াতে যাচ্ছিস যা, গতবছর কোথায় গেছিলি, তার আগের বছর...জন্মের মুহূর্তে...জন্মের আগের বেড়ানো সওব গল্প এখানেই ফেঁদে বসতে হবে। এগুলো মেন্টাল টর্চারের আওতায় নিশ্চই পড়ে... ভালো করে সংবিধান খুঁজলে আর্টিকেল গুলো মিলবেই মিলবে। এই অব্দি যদি বা সহ্য করলেন। এরপর বের হবে থালা-বাটি। মুড়ি মাখা হবে ওখানেই বসে। লুচি-পরোটা- কষা মাংস, ভাত, আলুভাজা, স্যালাড , মিষ্টি দই কিচ্চু ভোলে না এ...

ক্রিপলার্স

Image
১. আজকাল ছাদে আসতে বড় ভাল লাগে। এখানে ওখানে থোকা থোকা নাম না জানা ফুল , প্রকৃতির নিজস্ব গন্ধ আর সবুজের সমারোহ। এর পুরো ক্রেডিটাই তার নিজের।  বিয়ে হয়ে এসে থেকে যত  না মন দিয়ে ঘর গুছিয়েছে তার চেয়েও বেশি এই ছাদ -বাগান।  পুরো কলকাতা শহর চষে ফেলেছে একেকটা দুপুর ; শপিং নয় , গাছের চারা সংগ্রহের জন্য। ইদানিং ক্রীপলারস  প্রীতি টা অবসেশনএর জায়গায় চলে গেছে। সারা ছাদ জুড়ে নাম না জানা লতানে গাছে ভর্তি। এর সবটা আবার নার্সারি থেকে আনা নয় , কোনটা কোনটা রাস্তা ঘাট থেকে, লোকের বাগান থেকে তুলে আনা। গত সপ্তাহে সোনাপুর স্টেশনের কাছে একটা নার্সারি থেকে ঝুমকো লতা আনতে গিয়ে প্রথম চোখে পড়ে গাছটা। বা বলা যায় গাছটাই ডেকে নেয় তাকে। ছোট নার্সারি। এক বিহারী বুড়ো দেখাশোনা করে। সারা জায়গাটা জুড়ে শ্যাওলা আর নানা জংলী গাছ আগাছায় ঘেরা। বেশ রহস্যময় চেহারা। এর আগেও বার কয়েক এসেছে এখানে। ঝুমকো লতার টবটা উঠিয়ে হাটা লাগানোর সময় খেয়াল করল পাশাপাশি দুটো ক্যাকটাসের টবের ফাঁক দিয়ে বেশ ডানা মেলার মত করে বেড়ে উঠছে গাছতা। আর তারই একটা থেকে শুঁড়ের মত অংশ তার জুতোর ফিতে তে জড়িয়ে আছে। যেন বা গাছটা তাকে ...
অন্য অনিতার ডায়রী জীবন মুচকি হাসে... একরাত্তিরে বাবার কাছে হোস্টেলের গল্প শুনলাম। হোস্টেল মানে অনেক বাচ্চারা একজাগায় থাকে, একসাথে পড়াশুনা করে, গান গায়, নাচ করে , যথেচ্ছ খেলাধুলা করে ইত্যাদি। পৃথিবীতে এত সুখের জায়গা থাকতে আমি বা কেন বঞ্চিত হবো?! অতএব মাঝরাতে কান্না জুড়লাম 'হোস্টলে যাবো'। আসলে সাড়ে তিন বছর বয়সের আধো বুলিতে হোষ্টেল কথাটাও তখন উচ্চারণ করা কঠিন ছিল। তারপরেই গপ্পটা খুব সহজ। আমাকে বান্ডিল করে এক সপ্তাহের মধ্যে চালান করতে বাবা-মাকে কোনরকম বেগ পেতে হয়নি। হোষ্টেলে এসে প্রথমেই বুঝলাম এই সেই জায়গা যেখানে পৃথিবীর যত ঝড়তি পড়তি মাল এসে পৌঁছায়। তারপর ...লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান , নেহি তো উজবেকিস্তান চলা জাউঙ্গা। অর্থাৎ টিফিনের লাইন, খাবারের লাইন, মাপা খাবার জল, মাপা চান-পটির জল,  পায়খানার লাইন সব মিলিয়ে কার্গিল সিচুয়েশন। এইসব কিছুর সাথে লড়ে নেবার পর আছে দলে মিশে যেতে হবে অথবা কোন ঠাসা হওয়া, ভাষাগত , ধর্ম , কাস্ট, ফর্সা-কালো সব কিছুর ভিত্তিতে দল।  এই সবকিছুর পর আসে পড়াশুনা। সেটাও একটু করতে হয় বৈকি, তারও একটা দল আছে যে! তবু কিভাবে যেন একটা স্বর্গ খুঁজে পেলাম। স্কুলের...

'মন কস্তুরী রে ...জগ দস্তুরী রে...বাত হুয়ি না পুরি রে...'

Image
'মন কস্তুরী রে ...জগ দস্তুরী রে...বাত হুয়ি না পুরি রে...' জায়গাটা খুব ছোট। দুটো ছোট কাঠের পাল্লা দেওয়া জানলা। বাড়িটাও কাঠের। বাড়ী বলতে এককামরার একটা ঘরকে প্লাই দিয়ে পার্টিশন করে দুদিকে দুটো কাঠের ছোট টেবিল। দুটো দুটো চারটে বেঞ্চি দিয়ে ছয় থেকে আটজনের বসার ব্যবস্থা।  বাহুল্য নেই, বিবর্ণতাই এর রূপসজ্জা। লাগোয়া কিচেনে সারি সারি  সসেজ আর ড্রাইমিট  টাঙানো; ঠিক তার নিচেই কাঠের দুমুখো চুল্লী। দাউ দাউ করে আগুন আর তেল মশলার ভাপ উপরের ঝোলানো মাংস গুলোকে ঝলসে দিচ্ছে। ঝুলন্ত সসেজের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে চর্বি গলা তেল। মেনু কিন্তু খুব সিম্পল। সসেজ ফ্রাই, ড্রাইমিট ফ্রাই, চাউমিন অথবা ফ্রায়েড রাইস আর কখনও সখনো মোমো। দোচালা বাড়িটার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হল চালের কিছুটা অংশ কাঁচের। ঘষা কাঁচের মধ্যে দিয়ে ভোরের আলো থেকে গোধূলী সবই হুইস্কির গ্লাসে রিফ্লেক্ট করবে। জানলা দিয়ে তাকালেই চোখে পড়বে একটা পিচরাস্তা ঝিম মেরে পড়ে আছে। লোকজন নিজস্ব লয়ে দৈন্দিনকার কাজকর্মে ব্যস্ত। রাস্তার গায়ে সারি দিয়ে ছোট ছোট দোকান। তার পরেই বিশাল খাদ। সেই খাদের গা বেয়ে ধাপে ধাপে নিচে নামলেই একটা পাহাড়ী বসতি। মাঝ...

কুড়ি টাকা ভাগা----------------------

Image
কুড়ি টাকা ভাগা ------------------------------ গলার কাছে অনেক্ষন ধরে অস্বস্তি হচ্ছিল...হ্যাক করে ঢেঁকুর উঠতেই ভিতরটা জ্বলে উঠল। গলা দিয়ে মুরগির মশ্লাদার গন্ধসহ ঝাঁজালো একটা টেষ্ট। বুকটা জ্বলে উঠল। দলা পাকানো থুতু টা মেঝের এককোনে ছুড়ে দিয়ে বিপিন লাশটার দিকে এগিয়ে গেল। বয়স বড়জোড় ষোল হবে মেয়েটার। গতরাতে এসেছে। এসে ইস্তক পুলিশ, নেতা মন্ত্রী শালা আর কত কে যে ঘুরে গেল...যত্ত বাওয়াল। আরে এসব কাজ কি তাড়াতাড়ি হয়! ডাক্তার আসবে , লাশ খুলবে, সব নেড়ে চেড়ে রিপোর্ট দেবে। রেপ টেপ থাকলে আবার অন্য হ্যাপা।  এই মেয়েটা অবশ্য স্কুল থেকে আসার পথে হাইওয়েতে লরির নিচে পড়েছিল। যাকগে আজকের মত এই লাশটা বের করে দিলেই আজ ছুটি। তাও দেখতে দেখতে নটা বেজে গেছে পা চালিয়ে হাটলে লাষ্ট বনগাঁ লোকাল টা পেয়েই যাবে।  সব সেরে রাস্তায় পা দিতে দিতে দশটা পার হয়ে গেল। আন্ডারপাসের ভিতরের দোকানগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। একদম শেষ মাথায় একটা আলো জ্বলছে টিম টিম করে। আজ নেশাটা একটু বেশিই চড়েছে... তবু বুঝতে পারল সেই বুড়িটা...মুখের একদিকটা কাপড়ে ঢাকা আগের দিনের মতই। আদা রসুনের ভাগা নিয়ে বসেছে। কাছে যেতেই সেদিনের মতই খনখনে গলায় ...