অসমাপ্ত দিনলিপি
বাইপাসের রাস্তার মাঝ বরাবর একটা কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে। কাজ অবশ্য বহু বছর ধরেই চলছে তবে রোজকার আসা যাওয়ার পথে বিষয়টা কেমন গা সওয়া হয়ে গেছে। আজ হঠাৎ বাসের জানলা দিয়ে তাকিয়ে এই অর্ধসমাপ্ত কংক্রিটের জগদ্দলটাকে মনে হল একটা পঙ্গু সরীসৃপ রাস্তার মাঝে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। মেঘলা ভোরে পুরো দৃশ্যটা কেমন যেন সেতারে তোলা অসমাপ্ত ভৈরবী। যদিও এখন খুব ভোর নয়, সাড়ে ছটা বেজে গেছে। সমাপ্তির মনে পড়ল ছোটবেলায় রেডিও তে একটা গান খুব বাজতো, ভোরের দিকেই বাজতো
জাগো মোহন প্যারে
নবযুগ চুমে নয়ন তিহারে
...........….......................
কিরণে পড়ি গাঁগরী ছলকায়ে
জ্যোত কা প্যাসা পিয়াস বুঝায়ে
ফুল বনে মন কে অঙ্গারে
এতটা গুনগুনিয়ে নিজেই অবাক হয়ে গেল; আজকাল কিছুই মনে থাকে না অথবা মনে রাখতে চায় না। এই যে জগদ্দল পর্বতটি যে কোনদিন সচল হয়ে উঠে শহরের বুক চিড়ে আলো আর গতিময়তায় নিজের অস্তিত্বের অস্থির উপস্থিতি জানান দেবে , সেটি আসলে কি তৈরী হচ্ছে ! উড়ালপুল না মেট্রোর লাইন? অনেক্ষন ভ্রূ কুঁচকে বসে থাকতে থাকতে আরেকটা লাইনও মনে পড়ে গেল 'জগ উজিয়ারা ছায়ে,
মনকা অন্ধেরা যায়ে,
কিরণওকে রানী গায়ে ,
জাগো হে মেরে মন মোহন প্যারে'
কাঁদাপাড়া কাঁদাপাড়া!! আওয়াজটা কানে আসতেই চটকা ভেঙ্গে গেল। আজও দু স্টপেজ এগিয়ে এসেছে। এইবার আবার দুখানা অটো নিতে হবে। এত লেট খেতে খেতে এই চাকরীটাও যাবে মনে হয়। ছেড়া ছেড়া গানের লাইন, অসমাপ্ত উড়ালপুল আর অফিসের লেট সব মিলে তালগোল পাঁকিয়ে মাথা যন্ত্রণায় একটা 'উহঃ' বেরিয়ে এল বেশ জোড়ে। অটোতে বসা বাকি প্যাসেঞ্জারদের অবাক চাউনিতে খুব অপ্রভিত লাগল।
অটো থেকে নেমেই চোখটা ধাঁধিয়ে গেল রোদে। সকালের জমাটবাঁধা মেঘ সব এক ফুঁয়ে কোথায় উড়ে গেল। সারি সারি এক প্যাটার্নের বাড়ির গুলির মধ্যে থেকে অফিস বিল্ডিংটাকে খুঁজে পেতে একটু সমস্যা হয় রোজই তবে ঠিক অফিস বিল্ডিং এর পাশেই একটা ভ্যাটের ধারে অযত্নে বড় হওয়া বোগেনভেলিয়ার ঝাড়টা দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে ঢুকে পড়ল।

Comments