'মন কস্তুরী রে ...জগ দস্তুরী রে...বাত হুয়ি না পুরি রে...'

'মন কস্তুরী রে ...জগ দস্তুরী রে...বাত হুয়ি না পুরি রে...'
জায়গাটা খুব ছোট। দুটো ছোট কাঠের পাল্লা দেওয়া জানলা। বাড়িটাও কাঠের। বাড়ী বলতে এককামরার একটা ঘরকে প্লাই দিয়ে পার্টিশন করে দুদিকে দুটো কাঠের ছোট টেবিল। দুটো দুটো চারটে বেঞ্চি দিয়ে ছয় থেকে আটজনের বসার ব্যবস্থা।  বাহুল্য নেই, বিবর্ণতাই এর রূপসজ্জা।
লাগোয়া কিচেনে সারি সারি  সসেজ আর ড্রাইমিট  টাঙানো; ঠিক তার নিচেই কাঠের দুমুখো চুল্লী। দাউ দাউ করে আগুন আর তেল মশলার ভাপ উপরের ঝোলানো মাংস গুলোকে ঝলসে দিচ্ছে। ঝুলন্ত সসেজের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে চর্বি গলা তেল। মেনু কিন্তু খুব সিম্পল। সসেজ ফ্রাই, ড্রাইমিট ফ্রাই, চাউমিন অথবা ফ্রায়েড রাইস আর কখনও সখনো মোমো।
দোচালা বাড়িটার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হল চালের কিছুটা অংশ কাঁচের। ঘষা কাঁচের মধ্যে দিয়ে ভোরের আলো থেকে গোধূলী সবই হুইস্কির গ্লাসে রিফ্লেক্ট করবে। জানলা দিয়ে তাকালেই চোখে পড়বে একটা পিচরাস্তা ঝিম মেরে পড়ে আছে। লোকজন নিজস্ব লয়ে দৈন্দিনকার কাজকর্মে ব্যস্ত। রাস্তার গায়ে সারি দিয়ে ছোট ছোট দোকান। তার পরেই বিশাল খাদ। সেই খাদের গা বেয়ে ধাপে ধাপে নিচে নামলেই একটা পাহাড়ী বসতি। মাঝে মাঝে রোদ পড়লেই কাঞ্চনজঙ্ঘার আভাষ।  এই ঝিমধরা রাস্তাটাই জেগে উঠেছে একটু ব্যস্ত সমস্ত হয়ে যখন নিকটবর্তী ঘুমস্টেশন থেকে টয়ট্রেন গদাইলস্করি চালে ট্যুরিস্ট নিয়ে আশা যাওয়া করছে।
কাঠের বাড়িটা ট্রেনের ঝাঁকুনিতে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
'তু কিসি রেইল সি গুজারতি হে
মে কিসি পুল সা থরথরাতা হু
তু ভালে রত্তি ভর না সুনতি হে
মে তেরা নাম বুদবুদাতা হু।'
সস্তার মোটা কাঁচের গ্লাস ভরে উঠবে বড়জোড় অফিসার চয়েস বা আরএস এ। হুইস্কির এর বেশি স্টক নেই এখানে। এর বেশি কারো প্রয়োজনও হয় না এখানে যারা আসে তাদের। মুখ বদলাতে  বুড়ো সাধু বা হিট বিয়র বলা যেতেই পারে। ঠান্ডা শিরশিরানির অনুভব করতে করতে হুইস্কির গ্লাসে হালকা চুমুক দিয়ে মশলাদার সসেজের টুকরো জিভে জড়িয়ে নিয়ে আলতো আয়েসে চোখ বুজতে না বুজতেই কোথা থেকে এক টুকরো মেঘ এসে চারিপাশটা ঝুপঝাঁপ ভিজিয়ে দিয়ে হাওয়া হয়ে যাবে। তারপর হাল্কা রোদ্দুর। আবার বৃষ্টি...আবার একটু সোনালী আলো...রামধনুর ঝিলিক...বৃষ্টি...টয় ট্রেন....ঝমর ঝমর ঝম...একটু হুইস্কি...একটু সসেজ...একটু জীবন...একটু ভালবাসা ...আর ? আর তুমি...আর আমি...মুখোমুখি... এই বেঁচে থাকা।
সন্ধ্যে ঘনায়। পাহাড়ী এলাকার পরতে পরতে অন্ধকার নামে। 
'রাত যো বাকি হে
শাম সে তাকি হে
নিয়ত মে থোরি খারাবিয়া লাগা
মে হু পানীয়ো কে বুলবুলে যেইসা
তুঝে সোচু তো ফুট যাতা হু'
    অথবা
' মন কস্তুরী রে....জগ দস্তুরি রে...'

Comments

Anindita said…
সাবলীল লেখনী পাঠককে টেনে নিয়ে যায় স্যুররিয়ালিজম এ । পুরো চুমু লেখা
Anirneelakash said…
সাবলীল লেখনী পাঠককে টেনে নিয়ে যায় স্যুররিয়ালিজম এ । পুরো চুমু লেখা
😊😊 থাঙ্কু থাঙ্কু
Subhankar Paul said…
অলৌকিক লিখনশৈলী । পড়ে অন্য জগতে চলে গেলাম । এই প্রথম লেখা পড়লাম । পুরো হাতপাখা হয়ে গেলাম । আরও লেখা পড়তে চাই ।

Popular posts from this blog