অন্য অনিতার ডায়রী
জীবন মুচকি হাসে...
একরাত্তিরে বাবার কাছে হোস্টেলের গল্প শুনলাম। হোস্টেল মানে অনেক বাচ্চারা একজাগায় থাকে, একসাথে পড়াশুনা করে, গান গায়, নাচ করে , যথেচ্ছ খেলাধুলা করে ইত্যাদি।
পৃথিবীতে এত সুখের জায়গা থাকতে আমি বা কেন বঞ্চিত হবো?! অতএব মাঝরাতে কান্না জুড়লাম 'হোস্টলে যাবো'। আসলে সাড়ে তিন বছর বয়সের আধো বুলিতে হোষ্টেল কথাটাও তখন উচ্চারণ করা কঠিন ছিল।
তারপরেই গপ্পটা খুব সহজ। আমাকে বান্ডিল করে এক সপ্তাহের মধ্যে চালান করতে বাবা-মাকে কোনরকম বেগ পেতে হয়নি। হোষ্টেলে এসে প্রথমেই বুঝলাম এই সেই জায়গা যেখানে পৃথিবীর যত ঝড়তি পড়তি মাল এসে পৌঁছায়। তারপর ...লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান , নেহি তো উজবেকিস্তান চলা জাউঙ্গা। অর্থাৎ টিফিনের লাইন, খাবারের লাইন, মাপা খাবার জল, মাপা চান-পটির জল, পায়খানার লাইন সব মিলিয়ে কার্গিল সিচুয়েশন।
এইসব কিছুর সাথে লড়ে নেবার পর আছে দলে মিশে যেতে হবে অথবা কোন ঠাসা হওয়া, ভাষাগত , ধর্ম , কাস্ট, ফর্সা-কালো সব কিছুর ভিত্তিতে দল। এই সবকিছুর পর আসে পড়াশুনা। সেটাও একটু করতে হয় বৈকি, তারও একটা দল আছে যে!
তবু কিভাবে যেন একটা স্বর্গ খুঁজে পেলাম। স্কুলের লাইব্রেরী টা ছিল ট্রেজার আইল্যান্ড। পড়তে শুরু করলাম। একাকিত্ব সারানোর এর চেয়ে বড় ওষুধ আর নেই। অথচ একদিন এই আমি অনেক বন্ধু হবে বলে বাড়ী থেকে পালাতে চেয়েছি।
মায়ের বুকে মুখ ঠেসে ঘুমানোর জন্য হাহাকার নিয়েই কাপড় কাছতে শিখলাম, নিজে হাতে খেতেও। মিশনারী হোষ্টেলে টেবিল চেয়ারে হাত পৌছাত না। চেয়ারের উপর আরেকটা পিড়ি চাপিয়ে খেতে বসলাম। হাত পৌঁছাতে হবে তো! জীবন খুব তাড়াতাড়ি শিখিয়ে নেয়, স্বভাব পাল্টে যায়; কেবল ভিতরের হাহাকার গুলো আজীবন রয়ে যায়।
ওই সময় একটা গান গুনগুনাতাম ' বল গোলাপ মোরে বল তুই ফুটবি সখী কবে?'
এত হট্টগোলেও একটি সখী জুটেছিল।পুনম। পাশের বস্তি থেকে আসতো আমাদের স্কুলে। ক্লাশ থ্রিতে পড়াকালীন পুনম কেটে পড়লো দুনিয়া ছেড়ে...এপেন্ডিক্স পেঁকে। ক্লাশ থ্রীর পক্ষে ওভারডোজ হয়ে গেছিল।
" পাখি গাহিছে মধুরবে–
তুই ফুটিবি, সখী, কবে "
Comments