অন্য অনিতার ডায়রী


Mother's Day বা Father's Day র সেলেব্রেশনগুলো দেখলে খুব অদ্ভুত অনুভূতি হয়। বুঝতে পারি যে আমার প্রাপ্তির থালার অনেকখানি খালি।  আমার মতো ভাঙ্গাচোরা পরিবারে মানুষ হওয়া লোকজন এইসব পরিস্থিতি তে কেমন অসহায় হয়ে পড়ে। কারণ আমরা কৈশোরে পা দেওয়ার অনেক আগেই জেনে গেছি বাবা তার বাবার দায়িত্ত্ব পালন করার জন্য শর্ত আরোপ করে। জিজ্ঞাসা করে আমি তার সাথে থাকবো কি না!?
আবার মার কাছেও এই সম্পর্ক এতটাই যন্ত্রণার যে সন্তান ত্যাগের মত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।  অবশ্য আমার মা পড়াশুনা বিশেষ জানতেন না। মূর্খ মানুষ। আর্থিক স্বাধীনতাও ছিল না সন্তানকে একা মানুষ করার মত।

বয়ঃসন্ধির কঠিন সময়গুলোয় মায়ের অভাব খুব বাজে। গোটা দুনিয়াকে তখন নিষ্ঠুর মনে হয়। পুরো পৃথিবীটাকে ঘৃণা করতে ইচ্ছে করে। মনে আছে ছোটবেলায় আমি একটা ডায়রী শুধু 'আমি আমার মাকে ঘৃণা করি, এই বেঁচে থাকাকে ঘৃণা করি, এই পৃথিবীকে ঘৃণা করি' লিখে ভরিয়ে দিয়েছিলাম। সেই ডায়রীও হোস্টেলের কেউ একদিন চুরি করে পড়ে হেসেছিল। তখন সীতার মত অপমানে মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল।
জীবনের এই কঠিন সময়গুলো আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল বই। যে কোন বই পেলে আমি গোগ্রাসে গিলতাম। বই আমাকে ভাসিয়ে নিত এক আলাদা জগতে। খিদে তেষ্টা ভুলে পড়তাম। সবচেয়ে ভালোবাসতাম গল্পের বই পড়তে। বোধহয় নিজের জীবনের কঠিন কঠোর থাপ্পরগুলো ভোলার জন্য যে কোন ধরনের গল্পের বই আমাকে ক্ষনিকের জন্য হলেও বাস্তব থেকে সরিয়ে নিয়ে যেত।
ক্লাশ থ্রীতে আবোল-তাবোল -সুকুমার সমগ্র, শেক্সপিয়র সমগ্র অনুবাদ, লরেল হার্ডি পড়ে শেষ করে ফেলেছিলাম। ক্লাশ ফাইভে বামুনের মেয়ে, দেবদাস। ক্লাশ সেভেনে পুতুলনাচের ইতিকথা, তিতাস একটি নদীর নাম।
 ক্লাশ টেনে উঠতে উঠতে বাংলা সাহিত্যের কতশত বই যে পড়ে শেষ করেছিলাম নিজেও আজ আর মনে করতে পারি না। বস্তুতঃ বই আমাকে পারিবারিক অশান্তি থেকে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যেত। মায়ের বুকে মুখ গোঁজা ছেড়ে বইয়ে মুখ গুঁজে ঘুমাতে শিখলাম। আজও বিছানায় বই নিয়ে ঘুমাতে ভালোবাসি। 
এভাবেই হয়তো অপ্রাপ্তি গুলো মুছে ওই বয়স থেকে এগিয়ে চলতে শুরু করেছিলাম। তখনও কাউন্সেলিং শব্দ টা জানি না, কিন্তু অজান্তেই সেল্ফ কাউন্সেলিং করে গেছি নিজেকে, প্রতিদিন, প্রতিমূহুর্তে।


Comments

Anirneelakash said…
ভালোবাসা নিও অনি,,, আর কিছুই বলবো না ❤️

Popular posts from this blog