ঠিক এইরকম একটা চাকরির খুব দরকার ছিল আরুনীর। রুবিনাদির সাথে আলাপ হয় মাসতুতো বোনের বিয়েতে গিয়ে। তখনই কথায় কথায় এই ভ্যাকেন্সির খবরটা শোনে। দেরী করে নি। বায়োডাটা সাজিয়ে দিন দুয়েকের মাথায় হাজির হয়। বারাসাত হেলাবটতলা, ছোট ছিমছাম অফিস। নাম 'বোলচাল' । লোক সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের প্রান্তিক মানুষদের উৎসব, গান, খাওয়া দাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা হয়। প্রায় প্রতিদিন কেউ না কেউ বড়সড় ব্যাগ নিয়ে অফিস ঢোকে। জিজ্ঞেস করলেই বলে ট্যুর আছে। কেউ রাজস্থান যাচ্ছে তো কেউ মেদিনীপুর। প্রথম প্রথম বেশ থ্রিলিং লাগত, এখন গা সওয়া হয়ে গেছে।
মাঝে মাঝে আরুণী ভাবে ঠিক এই সময়ে যখন এই চাকরি টা না পেলে কি হত? এর আগের জবটা ভালোই ছিল, তবে মধ্যমগ্রাম থেকে বালিগঞ্জ যেতে খুব সমস্যা হতে। প্রায় দিন রণ বলতো আর একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে পারো না? মা কে যদি এই বয়সেও রান্না করতে হয় তাহলে কি করে হবে?
প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও নতুন চাকরি খোজা শুরু করেছিল। এরমধ্যেই বাবিন এল। মাতৃত্বকালীন ছুটি আর কটা কোম্পানি দেয়। ছাড়তেই হল। তবে ডেলিভারির মাস ছয়েক পর থেকেই পাগলের মত চেষ্টা করেছিল। মুস্কিল হচ্ছে দূরে হলে হবে না, কলকাতার বাইরে যাওয়া বা কোনরকম ট্রাভেল করা চলবে না। সাত টার মধ্যে বাড়ি ঢুকতেই হবে। এতসব কন্ডিশন সামলে অবশেষে বোলচাল এ গতি হল। শাশুমা খুশ, রণও। বাড়ি ফিরে রান্নাটা সামলাতে অসুবিধে হয় না। তবে বাবিন কোলে আসার জন্য বড্ড কাঁদে। একটা রান্নার মাসির খোঁজ নিচ্ছে, কিন্তু যা খাই, পোষাতে পারলে হয়। রণ ফেরে ছয়টায়। কাছেই একটা প্রাইভেট স্কুলে ভূগোল পড়ায়। ওর জলখাবার, ছেলের খাবার সব মিলিয়ে আরেক প্রস্থ যুদ্ধ।
সেদিন জয়িতা ম্যাডাম বলছিল আরুনী আমাদের এখানে কাজ করতে কেমন লাগছে? তোমার নিজস্ব কিছু ইনপুট দাও আমাদের ফিল্ড টিমকে। তুমি তো আবার কম্পারেটিভ লিটারেচারের স্টুডেন্ট। চাও তো ফিল্ড টিম জয়েন করতে পারো। প্যাকেজ ভালো। আমি তো চাই তুমি এই রিসেপশন না সামলে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি প্রজেক্ট হ্যান্ডল করো। আরুনীর ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছিল। আবার ফিল্ড ওয়ার্ক!! এবার রণ বলবে আর বাড়ি থেকে বেরতে হবে না। অথচ এই রণই তো বিয়ের আগে কত গল্প করত দেশ বিদেশের, কত প্ল্যান ছিল ঘুরে ঘুরে কাজ করবে নানা জায়গায়।
দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গেল আরুনীর। আজকাল আর ততটা খারাপ লাগে না। সেও মানিয়ে নিয়েছে। অফিসও তার এফিসিয়েন্সি তে খুশি। চৌঠা এপ্রিল । বোলচালের প্রতিষ্ঠা দিবস। বেশ একটা ঘরোয়া আড্ডা, খাওয়া দাওয়া , গানবাজনা দিয়ে সেলিব্রেশন ঠিক হল। সমস্ত ফিল্ড স্টাফদের খবর পাঠানো, তাদের ট্রেনের, প্লেনের অনলাইন টিকেট কেটে মেল করা, কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা, হোটেল বুকিং...আরুনীর আর দম ফেলার সময় নেই। কদিন ধরে রণ বলছিল ওর বন্ধুর অফিসে রিসেপশনের জবটা নিতে। বাড়ী থেকে খুব কাছে। শেয়ারের বিজনেস। বিশেষ কিছু করতে হবে না। কল এটেন্ড, ক্লায়েন্ট হ্যান্ডলিং ইত্যাদি।
আরুনীর আর ঠাঁই নাড়া হতে ভালো লাগে না। তাছাড়া এই জবটার মধ্যে কি যেন একটা আছে। ওর ভালো লাগে। ঠিক কি ভালো লাগে সেটা ওর নিজের কাছেও পরিষ্কার নয়। জানে এখান থেকে বাড়ী ফিরতে বেশ দেরী হয়...কাছাকাছি কাজ হলে সুবিধাই হত; তাও ...।
অবশেষে চার তারিখ বোলচালের প্রতিষ্ঠা দিবসের আড্ডা শুরু হল সকাল থেকে । ফাউন্ডার মেম্বর থেকে বোর্ড মেম্বর সবাই হাজির। হাসি মজা গানে গানে বেশ বেলা হয়ে গেছে। আরুনী দ্রুত সাপোর্ট স্টাফদের নির্দেশ দিচ্ছিল লান্চ সার্ভ করার। এমন সময় জয়িতা ম্যাডাম বললেন : এইবার আরুনী ওর একবছরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে । কেমন লাগছে এখানে। কোন কাজটা সবচেয়ে ভালো লাগছে...কেন ভালো লাগছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় কেমন যেন ঘাবড়ে গেল আরুনী। ঘেমেনেয়ে একসা হয়ে গেল। মুখ দিয়ে শুধু দুলাইনই বেড়িয়ে এল: এই কাজ টা ...এই কাজ টা আমার বেশ ভালো লাগে। এই যে সবার খেয়াল রাখা, কাগজপত্র সামলানো, আর টিকেট কাটতে সবচেয়ে ভালো লাগে। বেশ নতুন নতুন জায়গার, গ্রামের টিকেট গুলো কাটতে কাটতে মনে হয় যেন আমিই যাচ্চি রিসার্চ ওয়ার্ক করতে...যখনই irctc র সাইট থেকে side upper berth এর টিকেটের কনফার্মেশন পাই; মনটা ভরে ওঠে। আমি না যেতে পারলেও ওটা তো আমার ফেভারিট সিট। আসলে ...হঠাৎ করে আরুনীর গলাটা ধরে আসে। জয়িতাদি এসে পিঠে হাত রাখে। আরুনী মাথা নামিয়ে ধন্যবাদ বলে দ্রুত সরে যায় লাঞ্চের বন্দোবস্ত দেখতে।
মাঝে মাঝে আরুণী ভাবে ঠিক এই সময়ে যখন এই চাকরি টা না পেলে কি হত? এর আগের জবটা ভালোই ছিল, তবে মধ্যমগ্রাম থেকে বালিগঞ্জ যেতে খুব সমস্যা হতে। প্রায় দিন রণ বলতো আর একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে পারো না? মা কে যদি এই বয়সেও রান্না করতে হয় তাহলে কি করে হবে?
প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও নতুন চাকরি খোজা শুরু করেছিল। এরমধ্যেই বাবিন এল। মাতৃত্বকালীন ছুটি আর কটা কোম্পানি দেয়। ছাড়তেই হল। তবে ডেলিভারির মাস ছয়েক পর থেকেই পাগলের মত চেষ্টা করেছিল। মুস্কিল হচ্ছে দূরে হলে হবে না, কলকাতার বাইরে যাওয়া বা কোনরকম ট্রাভেল করা চলবে না। সাত টার মধ্যে বাড়ি ঢুকতেই হবে। এতসব কন্ডিশন সামলে অবশেষে বোলচাল এ গতি হল। শাশুমা খুশ, রণও। বাড়ি ফিরে রান্নাটা সামলাতে অসুবিধে হয় না। তবে বাবিন কোলে আসার জন্য বড্ড কাঁদে। একটা রান্নার মাসির খোঁজ নিচ্ছে, কিন্তু যা খাই, পোষাতে পারলে হয়। রণ ফেরে ছয়টায়। কাছেই একটা প্রাইভেট স্কুলে ভূগোল পড়ায়। ওর জলখাবার, ছেলের খাবার সব মিলিয়ে আরেক প্রস্থ যুদ্ধ।
সেদিন জয়িতা ম্যাডাম বলছিল আরুনী আমাদের এখানে কাজ করতে কেমন লাগছে? তোমার নিজস্ব কিছু ইনপুট দাও আমাদের ফিল্ড টিমকে। তুমি তো আবার কম্পারেটিভ লিটারেচারের স্টুডেন্ট। চাও তো ফিল্ড টিম জয়েন করতে পারো। প্যাকেজ ভালো। আমি তো চাই তুমি এই রিসেপশন না সামলে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি প্রজেক্ট হ্যান্ডল করো। আরুনীর ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছিল। আবার ফিল্ড ওয়ার্ক!! এবার রণ বলবে আর বাড়ি থেকে বেরতে হবে না। অথচ এই রণই তো বিয়ের আগে কত গল্প করত দেশ বিদেশের, কত প্ল্যান ছিল ঘুরে ঘুরে কাজ করবে নানা জায়গায়।
দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গেল আরুনীর। আজকাল আর ততটা খারাপ লাগে না। সেও মানিয়ে নিয়েছে। অফিসও তার এফিসিয়েন্সি তে খুশি। চৌঠা এপ্রিল । বোলচালের প্রতিষ্ঠা দিবস। বেশ একটা ঘরোয়া আড্ডা, খাওয়া দাওয়া , গানবাজনা দিয়ে সেলিব্রেশন ঠিক হল। সমস্ত ফিল্ড স্টাফদের খবর পাঠানো, তাদের ট্রেনের, প্লেনের অনলাইন টিকেট কেটে মেল করা, কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা, হোটেল বুকিং...আরুনীর আর দম ফেলার সময় নেই। কদিন ধরে রণ বলছিল ওর বন্ধুর অফিসে রিসেপশনের জবটা নিতে। বাড়ী থেকে খুব কাছে। শেয়ারের বিজনেস। বিশেষ কিছু করতে হবে না। কল এটেন্ড, ক্লায়েন্ট হ্যান্ডলিং ইত্যাদি।
আরুনীর আর ঠাঁই নাড়া হতে ভালো লাগে না। তাছাড়া এই জবটার মধ্যে কি যেন একটা আছে। ওর ভালো লাগে। ঠিক কি ভালো লাগে সেটা ওর নিজের কাছেও পরিষ্কার নয়। জানে এখান থেকে বাড়ী ফিরতে বেশ দেরী হয়...কাছাকাছি কাজ হলে সুবিধাই হত; তাও ...।
অবশেষে চার তারিখ বোলচালের প্রতিষ্ঠা দিবসের আড্ডা শুরু হল সকাল থেকে । ফাউন্ডার মেম্বর থেকে বোর্ড মেম্বর সবাই হাজির। হাসি মজা গানে গানে বেশ বেলা হয়ে গেছে। আরুনী দ্রুত সাপোর্ট স্টাফদের নির্দেশ দিচ্ছিল লান্চ সার্ভ করার। এমন সময় জয়িতা ম্যাডাম বললেন : এইবার আরুনী ওর একবছরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে । কেমন লাগছে এখানে। কোন কাজটা সবচেয়ে ভালো লাগছে...কেন ভালো লাগছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় কেমন যেন ঘাবড়ে গেল আরুনী। ঘেমেনেয়ে একসা হয়ে গেল। মুখ দিয়ে শুধু দুলাইনই বেড়িয়ে এল: এই কাজ টা ...এই কাজ টা আমার বেশ ভালো লাগে। এই যে সবার খেয়াল রাখা, কাগজপত্র সামলানো, আর টিকেট কাটতে সবচেয়ে ভালো লাগে। বেশ নতুন নতুন জায়গার, গ্রামের টিকেট গুলো কাটতে কাটতে মনে হয় যেন আমিই যাচ্চি রিসার্চ ওয়ার্ক করতে...যখনই irctc র সাইট থেকে side upper berth এর টিকেটের কনফার্মেশন পাই; মনটা ভরে ওঠে। আমি না যেতে পারলেও ওটা তো আমার ফেভারিট সিট। আসলে ...হঠাৎ করে আরুনীর গলাটা ধরে আসে। জয়িতাদি এসে পিঠে হাত রাখে। আরুনী মাথা নামিয়ে ধন্যবাদ বলে দ্রুত সরে যায় লাঞ্চের বন্দোবস্ত দেখতে।

Comments