#প্রেমিক
সারাদিনের ধকলের পর মেসে ফিরে রোজকার বরাদ্দ রুটি আর ডিমের ঝোল কোনোরকমে গলাধঃকরণ করে সুস্মিতা সবে নিজের বিছানায় বসে ফেসবুকটা একটু খুলেছে এমন সময় মনে হল কে যেন ঘাড়ের উপর দিয়ে ড্যাব ড্যাবিয়ে চেয়ে আছে। উল্টো দিকের খাট থেকে রূপা বলল: আজ আর ফেসবুকে চ্যাট না করে সামনা সামনি চ্যাটিং কর। ও দেখ তেরা আশিক পিছে বয়ঠা হে!
চমকে তাকাতেই দেখল সেই মোটা কালো প্রায় বিঘত খানেক বড় টিকটিকি টা কুৎকুতে চোঁখে তাকিয়ে আছে। ছাদ থেকে নেমে একদম মাথার কাছের দেওয়ালে বসে আছে অথবা শুয়ে (ভগবান জানে) । চুলোয় যাক! একটা খবরের কাগজের রোল নিয়ে তাড়াতে উঠল সুমি ওরফে সুস্মিতা। এইজন্যই কর্নার সাইড বেড নিতে চাইছিল না কিন্তু কর্নার ছাড়া ওই সময় আর কোনো সিটও খালি ছিলনা মেসে। তার খাটের দুদিকেই দেওয়াল। যতসব দেওয়ালবাসীদের আনাগোনা... রাম লক্ষ্মণ টাইপ সব চক এপ্লাই করে দুদিকের দেওয়াল আলপনাতে ভরে উঠেছে। কাকিমা এসে সুমিকে দুবার হুমকিও দিয়ে গেছে দেওয়ালের রঙ বাবদ চার্জ করবে বলে; তবু কি যে করে।
আজ ব্যাটার এত সাহস একেবারে মাথার কাছে নেমে এসেছে। এমন আল্লাদেপনার মানে কি বাপু? ঝাঁটাপেটা করতে মন চাইলেও সাহসে কুললো না। ঝাঁকগে মরুকগে মোটামুটি তাড়িয়ে একটা নিরাপদ দূরত্বে ভাগানো গেছে।
আরো কিছুক্ষন ফোন ঘাটাঘাটি করতে করতে কখন যে চোখ লেগে গেল...একটা সুন্দর স্বপ্ন ...ডাল লেকে শিকারাতে বসে চারিদিকে সব ফুল বিক্রেতা তাকে ঘিরে দেখছে... উফফ জীবনের সেরা ক্লাসিকল ডান্সের পারফরম্যান্সটা সে নৌকাতেই দিচ্ছে। হঠাৎ মনে হল আরে সে তো জন্মে নাচ শেখেনি ! ধুর বাবা স্বপ্নে কি সব সত্যি সত্যি হয় নাকি!! ঝাঁকগে এত সুন্দর মেয়েরা সব হা করে যখন দেখছে সে নাচবেই। ফিলিং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইস দু একটা হান্ডু ছেলেও তো থাকতে পারত। আচ্ছা সবাই ক্রমশ ঘাড়ের কাছে ঝুঁকে পড়ছে কেন? এরম করলে সে নাচবে কিকরে। এত ফিস ফিস করে কি বলছে এরা! একটা দারুন হাতের মুদ্রা করে মাথার উপর থেকে হাতটা ঘুরিয়ে সামনে আনতেই অদ্ভুত নরম ও ঠান্ডা ঘিনঘিনে অনুভূতির সাথে সাথেই চোঁখ খুলে গেল ...ম্যাগো এটা কি হাতে! চিৎকার করে চোঁখ টা খুলতেই দেখল গোটা মেসবাসী তার উপর ঝুঁকে গোল্লা গোল্লা চোঁখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। আর তার হাতের উপর কালকেকার সেই বিটলে টিকটিকি হতচ্ছাড়া। খানিকক্ষন ভয়াবহ ভূমিকম্প হল দারুন শব্দ সহযোগে। নানা কসরত করে হতচ্ছাড়া প্রেমিক কে তাড়ানো গেল। ইস! আজ সিওর অফিস লেট ।
কোনোরকমে দুটো ভাত গলা দিয়ে নামিয়ে হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে রুপা আর সুমি দৌড়াতে থাকে। হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে রূপা থেমে গিয়ে সুমির দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলল সুমি তুইকি বয়ফ্রেন্ডকে অফিস নিয়ে যাচ্ছিস? বিরক্ত মুখে সুমি বলল: দেরি হচ্ছে রূপা ইয়ার্কি ছাড় আর তাড়াতাড়ি চল। রূপা ততধিক বড় বড় চোখ করে বলল একবার তোর ডানকাঁধের দিকে তাকিয়ে দেখ। তারপর আর কি! গরিয়াহাটের মোড়ে অজস্র হকার, অফিস পথযাত্রীর ভীড়ে হুলুসস্থূলুস কান্ড। দেওয়ালবাসীর কাঁধবাসী হয়ে বা কাঁধে বসে অফিস যাওয়ার উদ্দেশ্য জানা গেলনা। এত হৈ চৈ দেখে সে ব্যাটা চম্পট দিল অথবা গড়িয়াহাটে শপিং করতে গেল কিনা কে জানে!
এতসব করে সাড়ে দশটায় যখন অফিসে এসে ঢুকল, দেবাশীষ স্যার এসে একপ্রস্থ দাঁত খিচিয়ে গেল লেট করার জন্য। যাইহোক নিজের সিটে বসতে বসতে সুমি ভাবল ব্যাটা যে তার বালিগঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন মেস থেকে গাড়িয়াহাটে এসে হারাল; এ একপ্রকার ভালই হলো। রোজ রাতে আর ভয়ে ভয়ে ঘুমাতে হবে না। উফফ কাল রাত থেকে জ্বালিয়ে মারল। ঠিক হয়েছে! বেড়াল ঠিকানা খুঁজে বাড়ি ফিরে আসে এমন টা শোনা গেলেও টিকটিকি নিয়ে সেরম গল্প কখনই শোনেনি সে। কাজে মন দিল। টিফিন টাইম টাও ভালোই কাটল। আজ দেবাশীষ দা তিনটায় বেড়িয়ে গেল। ভালই হল সাড়ে পাঁচটাতে কেটে পড়া যাবে। উফফ কি শান্তি! আজ নিশ্চিন্তে ঘুমানো যাবে।
সব সেরে অফিস থেকে বের হতে প্রায় পৌনে ছটা বাজল। কালীঘাট মেট্রোর সামনে দাঁড়িয়ে দেখল একটা খালি 3সি/1 আসছে। চুপ চাপ উঠে জানলার ধারের সিটে বসে হতক্লান্ত অবস্থায় মাথাটা জানলায় ঠেকিয়েছে। একটু চোঁখটা লেগে এসেছে এমন সময় কন্ডাক্টর এসে টিকিট চাইল।না তাকিয়েই অভ্যস্ত হাতে ব্যাগের সাইড পকেট থেকে একটা দশ টাকা বের করে কন্ডাক্টরের দিকে এগিয়ে দিল। কন্ডাক্টর ওরে বাবাগোওও বলে তিন লাফ দিল। পিছনের সিট থেকে দুজন মহিলাও মাই গড বলে চিলচিৎকার দিয়ে স্প্রিং এর মত লাফ দিয়ে চলন্ত বাসে ছোটাছুটি শুরু করে দিল। মোট জনা সাতেক লোক বাসের মধ্যে আত্মরক্ষার তাগিদে যে হুড়োহুড়িটা করল তাতে ড্রাইভার সাহেব ও নিজের এবং অন্যের প্রাণ বাঁচাতে একটা হ্যাঁচকা ব্রেক মারল। আর সুমি পাথরের মত ড্যাবা ড্যাবা চোঁখে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে দেখল দশ টাকার নোটের বদলে তার হাতের মুঠোয় সেই কুচকুচেঁ কালো হতচ্ছাড়া কুৎকুতে চোখ পাকিয়ে বলছে কি ভেবেছ এত সহজে প্রেমিককে পরিত্যাগ করবে?
#হট্টগোলগল্প নয়... সত্যি
সারাদিনের ধকলের পর মেসে ফিরে রোজকার বরাদ্দ রুটি আর ডিমের ঝোল কোনোরকমে গলাধঃকরণ করে সুস্মিতা সবে নিজের বিছানায় বসে ফেসবুকটা একটু খুলেছে এমন সময় মনে হল কে যেন ঘাড়ের উপর দিয়ে ড্যাব ড্যাবিয়ে চেয়ে আছে। উল্টো দিকের খাট থেকে রূপা বলল: আজ আর ফেসবুকে চ্যাট না করে সামনা সামনি চ্যাটিং কর। ও দেখ তেরা আশিক পিছে বয়ঠা হে!
চমকে তাকাতেই দেখল সেই মোটা কালো প্রায় বিঘত খানেক বড় টিকটিকি টা কুৎকুতে চোঁখে তাকিয়ে আছে। ছাদ থেকে নেমে একদম মাথার কাছের দেওয়ালে বসে আছে অথবা শুয়ে (ভগবান জানে) । চুলোয় যাক! একটা খবরের কাগজের রোল নিয়ে তাড়াতে উঠল সুমি ওরফে সুস্মিতা। এইজন্যই কর্নার সাইড বেড নিতে চাইছিল না কিন্তু কর্নার ছাড়া ওই সময় আর কোনো সিটও খালি ছিলনা মেসে। তার খাটের দুদিকেই দেওয়াল। যতসব দেওয়ালবাসীদের আনাগোনা... রাম লক্ষ্মণ টাইপ সব চক এপ্লাই করে দুদিকের দেওয়াল আলপনাতে ভরে উঠেছে। কাকিমা এসে সুমিকে দুবার হুমকিও দিয়ে গেছে দেওয়ালের রঙ বাবদ চার্জ করবে বলে; তবু কি যে করে।
আজ ব্যাটার এত সাহস একেবারে মাথার কাছে নেমে এসেছে। এমন আল্লাদেপনার মানে কি বাপু? ঝাঁটাপেটা করতে মন চাইলেও সাহসে কুললো না। ঝাঁকগে মরুকগে মোটামুটি তাড়িয়ে একটা নিরাপদ দূরত্বে ভাগানো গেছে।
আরো কিছুক্ষন ফোন ঘাটাঘাটি করতে করতে কখন যে চোখ লেগে গেল...একটা সুন্দর স্বপ্ন ...ডাল লেকে শিকারাতে বসে চারিদিকে সব ফুল বিক্রেতা তাকে ঘিরে দেখছে... উফফ জীবনের সেরা ক্লাসিকল ডান্সের পারফরম্যান্সটা সে নৌকাতেই দিচ্ছে। হঠাৎ মনে হল আরে সে তো জন্মে নাচ শেখেনি ! ধুর বাবা স্বপ্নে কি সব সত্যি সত্যি হয় নাকি!! ঝাঁকগে এত সুন্দর মেয়েরা সব হা করে যখন দেখছে সে নাচবেই। ফিলিং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইস দু একটা হান্ডু ছেলেও তো থাকতে পারত। আচ্ছা সবাই ক্রমশ ঘাড়ের কাছে ঝুঁকে পড়ছে কেন? এরম করলে সে নাচবে কিকরে। এত ফিস ফিস করে কি বলছে এরা! একটা দারুন হাতের মুদ্রা করে মাথার উপর থেকে হাতটা ঘুরিয়ে সামনে আনতেই অদ্ভুত নরম ও ঠান্ডা ঘিনঘিনে অনুভূতির সাথে সাথেই চোঁখ খুলে গেল ...ম্যাগো এটা কি হাতে! চিৎকার করে চোঁখ টা খুলতেই দেখল গোটা মেসবাসী তার উপর ঝুঁকে গোল্লা গোল্লা চোঁখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। আর তার হাতের উপর কালকেকার সেই বিটলে টিকটিকি হতচ্ছাড়া। খানিকক্ষন ভয়াবহ ভূমিকম্প হল দারুন শব্দ সহযোগে। নানা কসরত করে হতচ্ছাড়া প্রেমিক কে তাড়ানো গেল। ইস! আজ সিওর অফিস লেট ।
কোনোরকমে দুটো ভাত গলা দিয়ে নামিয়ে হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে রুপা আর সুমি দৌড়াতে থাকে। হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে রূপা থেমে গিয়ে সুমির দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলল সুমি তুইকি বয়ফ্রেন্ডকে অফিস নিয়ে যাচ্ছিস? বিরক্ত মুখে সুমি বলল: দেরি হচ্ছে রূপা ইয়ার্কি ছাড় আর তাড়াতাড়ি চল। রূপা ততধিক বড় বড় চোখ করে বলল একবার তোর ডানকাঁধের দিকে তাকিয়ে দেখ। তারপর আর কি! গরিয়াহাটের মোড়ে অজস্র হকার, অফিস পথযাত্রীর ভীড়ে হুলুসস্থূলুস কান্ড। দেওয়ালবাসীর কাঁধবাসী হয়ে বা কাঁধে বসে অফিস যাওয়ার উদ্দেশ্য জানা গেলনা। এত হৈ চৈ দেখে সে ব্যাটা চম্পট দিল অথবা গড়িয়াহাটে শপিং করতে গেল কিনা কে জানে!
এতসব করে সাড়ে দশটায় যখন অফিসে এসে ঢুকল, দেবাশীষ স্যার এসে একপ্রস্থ দাঁত খিচিয়ে গেল লেট করার জন্য। যাইহোক নিজের সিটে বসতে বসতে সুমি ভাবল ব্যাটা যে তার বালিগঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন মেস থেকে গাড়িয়াহাটে এসে হারাল; এ একপ্রকার ভালই হলো। রোজ রাতে আর ভয়ে ভয়ে ঘুমাতে হবে না। উফফ কাল রাত থেকে জ্বালিয়ে মারল। ঠিক হয়েছে! বেড়াল ঠিকানা খুঁজে বাড়ি ফিরে আসে এমন টা শোনা গেলেও টিকটিকি নিয়ে সেরম গল্প কখনই শোনেনি সে। কাজে মন দিল। টিফিন টাইম টাও ভালোই কাটল। আজ দেবাশীষ দা তিনটায় বেড়িয়ে গেল। ভালই হল সাড়ে পাঁচটাতে কেটে পড়া যাবে। উফফ কি শান্তি! আজ নিশ্চিন্তে ঘুমানো যাবে।
সব সেরে অফিস থেকে বের হতে প্রায় পৌনে ছটা বাজল। কালীঘাট মেট্রোর সামনে দাঁড়িয়ে দেখল একটা খালি 3সি/1 আসছে। চুপ চাপ উঠে জানলার ধারের সিটে বসে হতক্লান্ত অবস্থায় মাথাটা জানলায় ঠেকিয়েছে। একটু চোঁখটা লেগে এসেছে এমন সময় কন্ডাক্টর এসে টিকিট চাইল।না তাকিয়েই অভ্যস্ত হাতে ব্যাগের সাইড পকেট থেকে একটা দশ টাকা বের করে কন্ডাক্টরের দিকে এগিয়ে দিল। কন্ডাক্টর ওরে বাবাগোওও বলে তিন লাফ দিল। পিছনের সিট থেকে দুজন মহিলাও মাই গড বলে চিলচিৎকার দিয়ে স্প্রিং এর মত লাফ দিয়ে চলন্ত বাসে ছোটাছুটি শুরু করে দিল। মোট জনা সাতেক লোক বাসের মধ্যে আত্মরক্ষার তাগিদে যে হুড়োহুড়িটা করল তাতে ড্রাইভার সাহেব ও নিজের এবং অন্যের প্রাণ বাঁচাতে একটা হ্যাঁচকা ব্রেক মারল। আর সুমি পাথরের মত ড্যাবা ড্যাবা চোঁখে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে দেখল দশ টাকার নোটের বদলে তার হাতের মুঠোয় সেই কুচকুচেঁ কালো হতচ্ছাড়া কুৎকুতে চোখ পাকিয়ে বলছে কি ভেবেছ এত সহজে প্রেমিককে পরিত্যাগ করবে?
#হট্টগোলগল্প নয়... সত্যি

Comments